মাহীব রেজা,ঢাকাঃ
করোনা ভাইরাস বিশ্বব্যাপী তার ভয়াল থাবা বসাতে শুরু করেছে। ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোর নাভিশ্বাস,
মানুষের হাহাকার কিংবা স্বজনকে হারিয়ে শেষ বিদায় না দিতে পারার বেদনা মানুষকে তাড়া
করে ফিরছে। করোনা থেকে
বাঁচতে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে 'গৃহবাসী' হয়েছে বিশ্বের
মানুষ। দীর্ঘ লকডাউন
ছাড়া এ ভাইরাস মোকাবেলা সম্ভব নয়।
বিশ্বের যখন এমন অবস্থা তখন করোনার বিষাক্ত ছোবল থেকে বাদ
যায়নি প্রিয় বাংলাদেশও। গত ২৬ মার্চ
থেকে সরকারি 'সাধারণ ছুটি'(যেটি মূলত অঘোষিত লক ডাউন) আটকাতে পারেনি করোনার
বিস্তার। দেশের ৮
বিভাগে 'কমিউনিটি ট্রান্সমিশন' আর শেষ পর্যন্ত ৬০ জনের মৃত্যু চিন্তার জন্ম দিয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েছে ১৬
মার্চ থেকে। সে হিসেবে
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ৩০ দিন পার করছি আমরা।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ বলে শিশুরা এখন ঘরে। তাদের উচ্ছ্বাস, দুরন্তপনা এখন চার
দেয়ালের বেড়াজালে আবদ্ধ। এ সময়টিতে
শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।
মনোবিজ্ঞানীদের মতে, মানুষের মানসিক বিকাশের ৯০ ভাগ ঘটে থাকে
শিশুকালে। গৃহবাসী
শিশুরা তাই মানসিক অবসাদ, ইন্টারনেট আসক্তি কিংবা নিরুৎসাহিত হয়ে যেতে পারে। তাদের মধ্যে গোমট আতঙ্ক দেখা দিতে
পারে যা তাদের সামাজিক যোগাযোগ বৈকল্য ত্বরান্বিত করবে। এজন্য মনোবিজ্ঞানীগণ করনীয় নির্ধারন
করেছেন।
মনোবিজ্ঞানীগণ বলছেন-
১. ঘরে থাকা শিশুটির সাথে ঘরোয়া খেলাধুলা (যেমন লুডো, দাবা)
করা যেতে পারে।
২. শিশুটিকে অল্প কিছু শারিরীক ব্যায়াম নিয়মিত করানো যেতে পারে।
৩. এ সময়টিতে খাদ্যাভ্যাসের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। পুষ্টিমান নিশ্চিত করে কম
শর্করাযুক্ত খাবার দিতে হবে।
৪. শিশুকে বাড়ির কাজে যুক্ত করা যেতে পারে।
৫. শিশুর স্মার্টফোন ব্যবহার ও গেমিং কমিয়ে দিতে হবে। এর বিপরীতে তাকে দিয়ে ছাদের বা
বারান্দার গাছগুলোর পরিচর্যা কিংবা ড্রইং করানো যেতে পারে।
৬. সারাদিনে শিশুকে উৎসাহিত করতে হবে। তার মধ্যে আত্মবিশ্বাস যাতে কমে না
যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
৭. দূর্যোগের খবর থেকে তাকে দূরে রাখা যাবে না। কিন্তু অবশ্যই তাকে দূর্যোগের খবরটি
কৌশলে দিতে হবে যাতে সে আতঙ্কিত না হয়।
তাকে ভালো খবর আগে দিতে হবে।
৮. শিশু এসময় বিভিন্ন গল্পের বই পড়তে পারে, গল্প লেখার জন্যে
তাকে প্রেরণা দিলে সে গল্প লেখার চেষ্টাও করতে পারে।
তাকে সবসময় পারিবারিক সঙ্গ প্রদান করতে হবে।
তার সাথে মিথস্ক্রিয়ায় অংশ নিতে হবে।
৯. শিশু যাতে মানসিকভাবে দূর্বল হয়ে না পড়ে সে জন্য তাকে ঘর
থেকে বারান্দায় বা ছাদে নিতে হবে।
চাইলে ছাদে ঘুড়ি ওড়ানো যেতে পারে।
১০. সর্বোপরি তার জন্য একটি সুনির্দিষ্ট রুটিন করে দিতে পারলে
সে তার 'গৃহবাসী' সময়টা শৃঙ্খলার মধ্যে কাটাতে পারবে। তাকে এ রুটিনে পড়াশোনার অংশগুলোও
যুক্ত করে দিতে হবে।
আমরা জানি না এ অচলাবস্থা কাটবে কবে। এ কঠিন সময়ে আমাদের চাঙা থাকতে হবে। গৃহবন্দি নয় নিজেদের গৃহবাসী করে
তুলতে হবে। শিশুরা যাতে
মানসিক অবসাদে না পড়ে সেদিকে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে। করোনা ভাইরাস আমাদের কাছে তার ভয়াল
রূপ নিয়ে এসেছে। দেশের এই
ক্রান্তি কালে আমাদের সবাইকে এক হয়ে করোনা মোকাবেলা করতে হবে। প্রার্থণা যেনো এই সঙ্কটের কালো মেঘ
কেটে গিয়ে রোদ ঝলমলে একটি সোনালি দিন আসে, সে দিনে শিশুদের কোলাহলে আবার মুখরিত
হবে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
0 মন্তব্য