শিশু বার্তা ডেস্কঃ
জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুকি মোকাবেলা,
প্রকৃতির
সৌন্দর্যবর্ধন,পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা এবং
সবুজ বাংলাদেশ গড়তে আজীবন মেয়াদী এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ করে এক দশক ধরে নিজস্ব অর্থায়নে
এলাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ
জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে হাজার হাজার সবুজ বৃক্ষ রোপন করে চলেছেন এক বৃক্ষপ্রেমী। শুধু
বৃক্ষরোপনই নয় আনুষ্ঠানিক ভাবে
বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মাঝে
তিনি বিনামূল্যে গাছের চারা বিতরন করেও এক উজ্জ্বল
দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন জনাব আবুল হোসেন গ্রিন।এর মুল কারন শিক্ষাথীদের
মাঝে বৃক্ষ রোপনের মনভাব গড়ে তুলতে পারলেই ভবিষ্যৎ অনেকটা আলোর মুখ দেখবে। ইতিমধ্যে
নিজস্ব অর্থায়নে তিনি প্রায় পনেরো
হাজার বৃক্ষ রোপন ও চারা বিতরণ করেছেন।
একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকুরি করে পরিবার চালানোর পাশাপাশি নিজের বেতনের কিছু জমানো
টাকায় চলছে তার আজীবন মেয়াদী গৃহীত এই নীরব বৃক্ষ রোপন কর্মসূচি। বৃক্ষভক্ত এই
ব্যক্তি হলেন সিরাজগঞ্জ উল্লাপাড়া উপজেলার বড়হর ইউনিয়নের ডেফলবাড়ি গ্রামের আবুল
হোসেন।তিনি ডেফলবাড়ী গ্রামের ভূমিহীন দরিদ্র কৃষক আব্দুল কাদের ও গৃহিনী মালেকা
বেগমের পুত্র।তার এই কর্মকান্ডের জন্য ইতিমধ্যে তিনি সকলের নিকট একজন বৃক্ষপ্রেমী
বা অক্সিজেনের
ফেরিওয়ালা হিসাবে পরিচিত পেয়েছেন।আবার কেউ কেউ তাকে বৃক্ষ পাগল,বৃক্ষবন্ধু,পরিবেশ যোদ্ধা,সাদা মনের মানুষও
হিসাবেও আক্ষায়িত করে
থাকেন।তিনি বৈশ্বিক তাপমাত্রা, কার্বন নিঃসরণ, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদির ক্ষতির ব্যাপকতা রোধ করে আগামী
প্রজন্মের বসবাসের উপযুক্ত পরিবেশ এবং সবুজ বাংলাদেশ গড়া সহ সবুজ বিশ্ব গড়ার
স্বপ্ন দেখতে এই বৃক্ষ রোপন বিপ্লব চালিয়ে যাচ্ছেন।
একান্ত সাক্ষাৎকার আবুল হোসেনের নিকট থেকে জানা যায়,বৃক্ষরোপন,বৃক্ষের চারা বিতরণ
ও সবজি বীজ বিতরণ একটি মহৎ কাজ হিসেবে পরিবেশের স্বাভাবিক ভারসাম্য রক্ষায় ও
দূষণমুক্ত সবুজ পরিবেশ তৈরিতে সবচেয়ে
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।তাছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে সাগর পৃষ্ঠের
তাপমাত্রা বাড়ার ফলে বরফ গলছে দ্রুত গতিতে। ঘূর্নিঝড়,সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস,অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি খড়া,বন্যা,নদীভাঙ্গন সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হচ্ছে
মানবজাতি। সাগরের উচ্চতা ও তাপমাত্রা যেভাবে বাড়ছে তা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে
আবহাওয়া আরো বিপদজনক হয়ে দাঁড়াবে।
২০৩০ সাল নাগাদ এখনকার তুলনায় কার্বন নির্গমনের মাত্রা ৪৫% কমাতে না পারলে বিশ্বের যে ৭০ কোটি মানুষ নিচু এলাকায় বাস
করে তাদের জীবন অনিশ্চিত হয়ে যাবে।২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বে অনেক জায়গায় বড় ধরনের
জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।বিশ্বে ৯০% প্রবাল দ্বীপ বিলিন
হয়ে যেতে পারে।সবমিলিয়ে এই পৃথিবীকে টিকিয়ে রেখে মানবজাতির বসবাসের জন্য জলবায়ু পরিবর্তন জনিত ঝুঁকি মোকাবেলায় সবুজ
বিশ্ব গড়ার কোনো বিকল্প নাই। তাই তিনি কুরআন ও হাদিসের আলোকে শিক্ষা গ্রহন করে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন,কার্বন নিঃসরন, জলবায়ু পরিবর্তন
ইত্যাদির ক্ষতির ব্যাপকতা রোধ করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বসবাসের উপযোগী সবুজ পরিবেশ
গড়ার প্রত্যয়ে ২০১০ সালে
"সবুজ গাছ সবুজ পরিবেশ গড়ে তুলি সবুজ বাংলাদেশ "স্লোগানে সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার বড়হর ইউনিয়নের
তার নিজ গ্রাম ডেফলবাড়ি কবরস্থান
প্রাঙ্গণে ১০০ টি সবুজ বৃক্ষের
চারা
রোপনের মাধ্যমে ব্যক্তিগতভাবে আজীবন মেয়াদি
বৃক্ষরোপন কর্মসূচী হাতে নিয়েছে।প্রাথমিকভাবে "সবুজ বৃক্ষ রোপন করি সবুজ সিরাজগঞ্জ জেলা গড়ি " প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে ইতিমধ্যে
সিরাজগঞ্জ
জেলার প্রায় শতাধিক স্কুল কলেজ, মসজিদ,মাদ্রাসা,ও কবরস্থান প্রাঙ্গণে প্রায় পনেরো হাজার বৃক্ষের চারারোপন ও শিক্ষার্থীদের মাঝে চারা
বিতরণ
করেছে ।এছাড়া বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থী,নারী ও প্রান্তিক চাষীদের মাঝে বিভিন্ন ধরনের সবজি বীজও বিতরণ করেছে।'বৃক্ষ যার যার পরিচর্যা ও অক্সিজেন
সবার' স্লোগানে চলছে তার আজীবন মেয়াদী গৃহীত বৃক্ষরোপন ও চারা বিতরণ
কর্মসূচী।পর্যায়ক্রমে দেশের প্রতিটি
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ,কবরস্থান, হাট-বাজার,খেয়া ঘাট ও জন
গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে
সকলের সার্বিক সহযোগিতায় সবুজ গাছের চারা রোপন করে
সবুজ বাংলাদেশ গড়া সহ সবুজ বিশ্ব গড়ার স্বপ্ন দেখছেন সিরাজগঞ্জে এই অক্সিজেনের
ফেরিওয়ালা।
বৃক্ষপ্রেমী যে মানুষটির কথা এতক্ষন আপনাদের জানাচ্ছিলাম
তার জীবনের পথচলা তেমন সহজ ছিল না, ভূমিহীন কৃষক পরিবারে জন্ম হওয়ায় অনেক পরিশ্রম করে নানা
প্রতিকুলতা অতিক্রম করে তাকে লেখাপড়া করতে হয়েছে।বড়হর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের
জীবন টা একটু ভালো কাটলেও মাধ্যমিক বিদ্যালয় জীবন শেষ হয়েছে নানা উত্থানপতনের ভিতর
দিয়ে।প্রাথমিক বিদ্যালয় পড়া অবস্থায় ছুটি হলেই স্থানীয় হাট বাজারে বাদম বিক্রি
করতেন।
বিশাল প্রতিকুলতা আর সীমাহীন অভাবের শিকারে ২০০০ সালে তার জীবনে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। বন্ধ হয়ে যায় লেখাপড়া।কারো কোন সহযোগিতা, পড়ালেখা করানোর আশ্বাস না পেয়ে হতাশ হয়ে ঘুরে বেড়ায় দেশের বিভিন্ন এলাকায়। বিশ টাকা ভাড়া দিয়ে গাড়ীর ছাদে বসে ঢাকায় গিয়ে একটি চায়ের দোকানেও কিছু দিন কাজ করেছেন। বাবা-মা ও বড়ভাইয়ের আশ্বাসে আবার ফিরে আসে বাড়িতে।অতঃপর ২০০১ সালে উল্লাপাড়া মার্চেন্ট পাইলট হাই স্কুলে নবম শ্রেনীতে ভর্তি হয়ে নতুন ভাবে শিক্ষাজীবন শুরু করেন আবুল হোসেন। ভেবেছিলেন এস.এস.সি পাস করলেই শেষ হবে শিক্ষাজীবন। কিন্তু অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও আল্লাহতালার অশেষ মেহেরবানিতে নিয়মিত পড়াশুনা করে ২০০৩ সালে উল্লাপাড়া মার্চেন্ট পাইলট হাই স্কুল থেকে এস.এস.সি পাস করে ভর্তি হলেন বড়হর স্কুল এন্ড কলেজে। ২০০৫ সালে বড়হর স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এইচ.এস. সি পাস করে ভর্তি হলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সিরাজগঞ্জ সরকারী কলেজে। ২০১০ সালে এক্সিম ব্যাংক শিক্ষা বৃত্তি পেয়ে কিছুটা দূর হয় অভাব নামের দুর্ভিক্ষের। হিসাববিজ্ঞান বিষয়ে প্রথম শ্রেণি পেয়ে বি.বি. এস অনার্স কোর্স সম্পন্ন করে মাস্টার্স এ ভর্তি হয় ঢাকা কলেজে।সেখান থেকেও প্রথম শ্রেণি লাভ করে শেষ করেন শিক্ষাজীবন।
বিশাল প্রতিকুলতা আর সীমাহীন অভাবের শিকারে ২০০০ সালে তার জীবনে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। বন্ধ হয়ে যায় লেখাপড়া।কারো কোন সহযোগিতা, পড়ালেখা করানোর আশ্বাস না পেয়ে হতাশ হয়ে ঘুরে বেড়ায় দেশের বিভিন্ন এলাকায়। বিশ টাকা ভাড়া দিয়ে গাড়ীর ছাদে বসে ঢাকায় গিয়ে একটি চায়ের দোকানেও কিছু দিন কাজ করেছেন। বাবা-মা ও বড়ভাইয়ের আশ্বাসে আবার ফিরে আসে বাড়িতে।অতঃপর ২০০১ সালে উল্লাপাড়া মার্চেন্ট পাইলট হাই স্কুলে নবম শ্রেনীতে ভর্তি হয়ে নতুন ভাবে শিক্ষাজীবন শুরু করেন আবুল হোসেন। ভেবেছিলেন এস.এস.সি পাস করলেই শেষ হবে শিক্ষাজীবন। কিন্তু অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও আল্লাহতালার অশেষ মেহেরবানিতে নিয়মিত পড়াশুনা করে ২০০৩ সালে উল্লাপাড়া মার্চেন্ট পাইলট হাই স্কুল থেকে এস.এস.সি পাস করে ভর্তি হলেন বড়হর স্কুল এন্ড কলেজে। ২০০৫ সালে বড়হর স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এইচ.এস. সি পাস করে ভর্তি হলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সিরাজগঞ্জ সরকারী কলেজে। ২০১০ সালে এক্সিম ব্যাংক শিক্ষা বৃত্তি পেয়ে কিছুটা দূর হয় অভাব নামের দুর্ভিক্ষের। হিসাববিজ্ঞান বিষয়ে প্রথম শ্রেণি পেয়ে বি.বি. এস অনার্স কোর্স সম্পন্ন করে মাস্টার্স এ ভর্তি হয় ঢাকা কলেজে।সেখান থেকেও প্রথম শ্রেণি লাভ করে শেষ করেন শিক্ষাজীবন।
দরিদ্র মা বাবার
হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম,অনেকের সহযোগিতা, নিজের অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও কঠোর অধ্যয়ন আবুল হোসেনকে এনে দিয়েছে ডেফলবাড়ী পূর্বপাড়ার প্রথম মাস্টার্স পাশ করার
খেতাব।২০১৩ সালে এক্সিম ব্যাংকে যোগদানের মাধ্যমে শুরু করে পেশাদারী কর্মজীবন।
বর্তমানে তিনি এক্সিম ব্যাংক সিরাজগঞ্জ শাখায় কর্মরত আছেন।ছোট বেলা থেকে তার ইচ্ছা
ছিল যদি কখনো নিজ পায়ে দাঁড়ায় তিনি দেশ ও মানুষের কল্যাণে কিছু করবেন। সেই তাগাদা
থেকে তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন আজীবন মেয়াদী বৃক্ষ রোপন কর্মসূচি। তার মতে মানুষের জন্য
বিনামূল্যে সবুজ নির্মল পরিবেশ গড়া অনেক ভালো একটি কাজ।
0 মন্তব্যসমূহ