মোবাইল নয়, বই হোক শিশুদের বন্ধু


মো.রাকিব হাসান হৃদয় প্রকাশের সময় : ১৪/০৬/২০২৪, ১১:২১ PM
মোবাইল নয়, বই হোক শিশুদের বন্ধু

তরুণ প্রজন্মকে ইন্টারনেট প্রযুক্তি মাদকের মতো আচ্ছন্ন করে রেখেছে। দিনদিন ইন্টারনেট প্রযুক্তির প্রভূত উন্নতির ফলে আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা যেমন আগের চেয়ে বহুলাংশে উন্নত হচ্ছে, তেমনি আমাদের তরুণ প্রজন্ম মাদকে আসক্ত হওয়ার মতো ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউবে আসক্ত হয়ে পড়ছে। তারা ফেসবুক ও ম্যাসেঞ্জারে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় ব্যয় করছে। মোবাইল ফোন নিয়ে সারাদিন পড়ে থাকার ফলে নতুন প্রজন্ম হতাশা এবং মানসিক বিকারগ্রস্ততার মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠছে।

বিজ্ঞানের আশীর্বাদ যেমন আছে, তেমনি অভিশাপও আছে। বই এর বদলে শিশুরা মোবাইল মুখী হচ্ছে। দিয়াশলাইয়ের বাক্সের মতো ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে হাতে মুঠো ফোন, ট্যাব, কম্পিউটার। বর্তমান প্রজন্ম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেম ফেসবুকে মূল্যবান সময়গুলো নষ্ট করছে । এ যেন এক মানসিক ব্যাধীতে পরিণত হয়েছে। ফেসবুক এবং মুঠোফোন আসক্তি মাদকাসক্তির চেয়েও ভয়াবহ আকার ধারন করছে। কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের উপর দারুণভাবে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তরুণ সমাজ এতে করে পর্ণোগ্রাফিতে আসক্তি হয়ে পড়ছে। ১৮ বছরের আগে শিশুদের হাতে স্মার্টফোন দেয়া যাবে না। এ জন্য পারিবারিক সচেতনতার পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে সবার আগে।

অতীতে তরুণরা সুন্দর ঝলমলে শৈশব কাটিয়েছে। বিকালে মায়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে খেলার মাঠে গিয়ে পৃথিবী জয়ের আনন্দ অনুভব করেছে। সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে বই নিয়ে টেবিলে বসে পড়েছে। আর বর্তমান তরুণদের হাতে মোবাইল। বর্তমান প্রজন্ম শারীরিক গঠন ও মানসিক প্রশান্তির মধ্যে বেড়ে ওঠার সুযোগ হারিয়ে ফেলেছে।

বই পড়লে জ্ঞান বৃদ্ধি পাবে—সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু আপনার সন্তানের শরীর সুস্থ রাখতেও বই পড়ার অভ্যাস দারুণভাবে সাহায্য করে। তাই তো চিকিৎসক নিয়মিত এক ঘণ্টা বই পড়তে পরামর্শ দিয়ে থাকে। এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, আজকের যুগে যেসব রোগে নতুন প্রজন্ম বেশি মাত্রায় ভুগছে তার বেশির ভাগ এর সঙ্গে মানসিক চাপের সরাসরি যোগ রয়েছে। আর বই পড়ার অভ্যাস এমন ধরনের সমস্যাকে দূর করতে সহায়তা করে। সেই সঙ্গে হার্টের রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, স্ট্রোক প্রভৃতি রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস করে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত বই পড়ার অভ্যাস করলে ব্রেনের কর্মক্ষমতা বাড়তে শুরু করে। ফলে স্বাভাবিকভাবে মস্তিষ্কের একটি বিশাল অংশের ক্ষমতা এটতা বৃদ্ধি পায় যে, বুদ্ধির ধারও বাড়তে শুরু করে। তাই আসুন সন্তানের হাতে মোবাইল দেওয়ার আগে বই তুলে দিই। প্রযুক্তিতে আসক্ত হওয়ার আগেই বইয়ের প্রতি আসক্তি সৃষ্টি করি। তাহলেই শিশুরা আদর্শবান, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক হিসেবে গড়ে উঠবে।

কবি রবি ঠাকুর বলেছিলেন, “মানুষ বই দিয়ে অতীত ভবিষ্যৎ এর মাঝে সাঁকো বেধে দিয়েছে”। বই পড়া, বই প্রেমী করে তোলার অভ্যাস ইশকুল বেলা থেকে গড়ে তুলতে হবে। তাই আসুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বার্ষিক ক্রিড়া প্রতিযোগিতায় পুরস্কার নির্বাচন করতে হবে বই। বর্তমান প্রজন্মকে আগামীদিনের কান্ডারী করে গড়ে তোলতে হলে বই প্রেমী করে তুলতে হবে। তাই পুরষ্কার হিসেবে ঘটি-বাটির পরিবর্তে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বই দিতে হবে শিক্ষার্থীদের হাতে।