শিশু বার্তা ডেস্কঃ
আন্তর্জাতিক শিশু সম্প্রচার দিবস উপলক্ষে টেলিভিশনে শিশুদের কথা জোরালোভাবে দেশজুড়ে ছড়িয়ে দিতে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় তিনটি বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল এগিয়ে এসেছে। নতুন ভিডিও, শিশুদের তৈরি ভিডিও চিত্র, জনস্বার্থ ঘোষণাসমূহ ও টিভি স্পটের মাধ্যমে শিশুদের বিষয়গুলো তুলে ধরতে টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বিনামূল্যে এক মিনিট এয়ারটাইম বা প্রচার সময় বরাদ্দ করবে।
এই অংশীদারিত্বকে আনুষ্ঠানিক রূপ দিতে এটিএন নিউজ, ডিবিসি, মাছরাঙ্গা টেলিভিশন ও নাগরিক টিভি আজ ইউনিসেফের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। এর আগে ২০১২ সাল থেকে ইউনিসেফ আরও ১২টি টিভি স্টেশনের সঙ্গে একই ধরনের অংশীদারিত্ব গড়ে তোলে। চ্যানেলগুলো হচ্ছে: এটিএন বাংলা, দেশ টিভি, বৈশাখী, সময় টিভি, চ্যানেল টোয়েন্টিফোর, গাজী টিভি, একাত্তর টিভি, একুশে টিভি, দুরন্ত টিভি, বিজয় টিভি, বাংলা টিভি এবং রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ টেলিভিশন।
শিশুরা যাতে বিস্তৃত পরিসরে তাদের মতামত ও দাবী প্রকাশ করতে পারে সেজন্য তাদের ভিসুয়াল স্বাক্ষরতা প্রদান, মিডিয়ায় তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং ডিজিটাল প্লাটফর্মে তাদের অংশগ্রহন নিশ্চিত করার মাধ্যমে বাংলাদেশে শিশুদের অধিকার জোরদারে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে ইউনিসেফ। চলমান এই উদ্যোগকে আরও এগিয়ে নেওয়ার অংশ হিসেবে ইউনিসেফ উল্লেখিত টিভি কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে এই অংশীদারিত্ব গড়ে তুলেছে।
এটিএন নিউজের পক্ষে তাসিক আহমেদ, সিনিয়র সহ-সভাপতি, এটিএনবাংলা, ঢাকা বাংলা মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন লিমিটেডের (ডিবিসি নিউজ) এডিটর-ইন-চিফ ও প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ মঞ্জুরুল ইসলাম, মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের নির্বাহী পরিচালক অজয় কুমার কুণ্ড এবং ইউনিসেফ বাংলাদেশর প্রতিনিধি তোমো হোজুমি নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সমঝোতা স্মারকে সই করেন।
বাংলাদেশের শিশুদের জন্য বিনামুল্যে এক মিনিট এয়ারটাইম উৎসর্গ করতে সম্মত হওয়ায় টিভি স্টেশনগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তোমো হোজুমি বলেন, “সমাজে বিদ্যমান নেতিবাচক সামাজিক প্রথা ও রীতিনীতি পরিবর্তন করতে এবং ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে আপনাদের সমর্থন আমাদের দরকার। একসঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে আমরা শিশু, কিশোর ও তরুণ জনগোষ্ঠীর জীবনে দৃশ্যমান পরিবর্তন আনতে পারবো। এটা একাধারে তাদের জীবন ও গোটা সমাজের জন্য উপকার বয়ে নিয়ে আসবে, কারণ বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ টেকসই উন্নয়ন এই জনগোষ্ঠীর উপরই নির্ভর করবে।”
গত তিন দশকে শিশু অধিকার বাস্তবায়নে বাংলাদেশ অনেক অগ্রগতি অর্জন করেছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে: প্রতি এক হাজার জীবিত জন্মগ্রহণ করা শিশুর মধ্যে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুর হার ১৯৯০ সালের ১৯১ জন থেকে কমিয়ে ২০১৯ সালে ৪০ জনে নামিয়ে আনা; উন্নত স্যানিটেশন সুবিধা ব্যবহারের হার ১৯৯০ সালের ৯ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০১৯ সালে ৮৫ শতাংশে উন্নীত করা; এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুদের উপস্থিতির গড় হার ১৯৯০ সালের ৬৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০১৯ সালে ৮৬ শতাংশে উন্নীত করা।
তবে এখনও এমন অনেক বিষয় রয়েছে যেগুলোর প্রতি মনোযোগ দেয়া দরকার। বর্তমানে ৬-১৫ বছর বয়সী ৪৩ লাখ শিশু স্কুলের বাইরে রয়েছে। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের ৪৪ শতাংশেরই জন্মনিবন্ধন কোনো বেসামরিক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে হয় না বলে তথ্য রয়েছে। প্রতি দশজন শিশুর মধ্যে নয়জনই তাদের লালনপালনকারীর দ্বারা শারীরিক বা মানসিক নির্যাতনের শিকার হয় বা এ ধরনের অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যায়। যত বিয়ে হয়, তার অর্ধেকের বেশি হয় ১৮ বছর বয়সের আগেই। ১০ লাখেরও বেশি তরুণ বেকার। এ ছাড়াও ১ কোটি ৯০ লাখেরও বেশি শিশুর জীবন জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে হুমকির মুখে।
এটি উল্লেখযোগ্য যে, বাংলাদেশের ৬৪ শতাংশ নারী টেলিভিশনকে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে, যা ইঙ্গিত করে যে নারী ও শিশুদের কাছে সচেতনতামূলক বার্তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য এটিই সবচেয়ে কার্যকর মাধ্যম। সুতরাং, যতক্ষণ পর্যন্ত এই দেশে রাজনৈতিক সদিচ্ছা, সামাজিক সচেতনতা ও প্রয়োজনীয় সমর্থন এবং গণমাধ্যমের সহায়তা অব্যাহত থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত ক্রমবর্ধমান এই চ্যালেঞ্জগুলো সফলভাবে মোকাবেলা করা সম্ভব হবে।
আপনার মতামত লিখুন :