অাইনের সদ্ব্যবহার নাকি মানবতা?!!


Admin প্রকাশের সময় : ২২/১১/২০১৮, ৮:৩৩ PM
অাইনের সদ্ব্যবহার নাকি মানবতা?!!


ঋতুল মন্ডল স্নিগ্ধ(১৬),সিরাজগঞ্জঃ
আচ্ছা একটু ভেবে দেখি, ধরা যাক মেয়েটার বয়স বেশি নয়, বেশি নয় বললে ভুল হবে একদমই কম, এই বয়স পনেরো ষোলো হবে। বাবা নিতান্ত জায়গা-জমিহীণ, পথের ফকির বললে মন্দ হবে না। কি হবে যদি হঠাৎ জানতে পারেন যে মেয়েটির বাবা তার ভরণপোষণের ভার আর রাখতে পারছে না এবং তার বিয়ে দিতে উদ্বত হয়েছে?
হুম, আমি বাল্যবিবাহের কথাই বলছি। তবে প্রেক্ষাপট টা এখানে পরম্পরা বা লোকসংস্কৃতি বা তদ্রুপ স্রোতে গাঁ ভাসানো কোনো পরিবারের আখ্যান গাঁথা বলে কানভারী করার নয়, বরং একটু গভীর থেকে ভাবনার জানালা’টার কবজা গুলো আলগা করার।
কি যেন বলছিলাম? হ্যাঁ, মনে পড়েছে, কি করবেন যদি জানতে পারেন যে মেয়েটির আর একদিনের হলেও খাওয়ার টাকা তুলে দিতে তার পিতা অপারগ(দয়া করে চিন্তায় আত্মীয়ের সাহায্য আনবেন না এতো তাড়াতাড়ি) গভীর বিষয় বটে এটা।

কিরকম?
আচ্ছা বাবা টাকে কেন্সেল করে দিন, সে জায়গায় মৃত শব্দ দিয়ে রিপ্লেস করে ভাবুন মেয়ে তার এমন কোনো আত্মীয়ের কাছে আছে যে তার আর কোনো খরচ চালাতে নারাজ। তাই বিবাহের আয়োজন।
হুম, প্রশ্ন মনে আছে তো? কি করবেন?
আচ্ছা আপনি হলে কি দেখতেন তখন?
মেয়ের প্রিমেচার এজ নাকি মেয়েটার বর্তামান অবস্থা আই মিন স্বচ্ছলতা বা জীবন তাগিদ করার আরোষ্টতা।
অবশ্যই দুটা ক্ষেত্র চলে আসবে,
একদিকে আপনার ব্রেন, এক্ষেত্রে আইনের প্রতি শ্রদ্ধা যা সম্পর্কে আপনি অবগত, আর অন্যদিকে ঘুণে খাওয়া এক টুকরো বস্তু। যদি ব্রেন টা আপনার উই পোকা হয় তবে সেটা আপনার কাঠের বস্তু বলে আখ্যায়িত হৃদয়ে কুট কুট করা শুরু করে দিবে। অর্থাৎ দ্বিধা

এখন প্রশ্ন হলো দ্বিধা আসলো কোথা থেকে?
কই কই কোথা থেকে, উফ…..
আগেই বলেছি, গরিব, গরিব বললে অবস্থাটার পূর্ণপ্রতিরূপায়ন সম্ভব নয়। হদদরিদ্র বা তাররও বেশি। এমতাবস্থায় যদি আপনি তার বিয়ের মধ্যে দু’চারিটে সুধা রূপ উপদেশ দেন তবে তা সবার নিকট কণ্টক রূপ ধারণ করবে। বৃথা চেষ্টা ইন শুদ্ধ বাংলা?
না, তেমন না, আপনি আইনের মারপ্যাঁচ গলিয়ে বিয়ে বন্ধ করে তো নিলেন কিন্তু এরপর কি হবে? মেয়ের তো শাঁখেরকরাত অবস্থা। শুধু কি বিয়ে বন্ধ করাটাই যথেষ্ট?
না, অবশ্যই না। আচ্ছা সে ব্যাপারে পরে আসি।
আগে বলি, বিয়ে আটকাতে কি করবেন?
আপনি নিতান্ত বোকা না হলে এরূপ বলবেন না যে, ” বিয়ে বন্ধ করো, এটা আইনারূপ অপরাধ…” আগেই বলেছি সেটা বেস্ট অপসন নয়, কারণ তদ্রুপ পরিস্থিতিতে প্রত্যুত্তর আশাতীত নয় যে, “তাহলে কি করবো আমার অভাগিটার?”
তাই একক প্রচেষ্টা করুন, মানা করিনি, কিন্তু গাট বেধে থাকা ভালো, মানে প্রস্তুতি

একার চেষ্টার চেয়ে সকলের চেষ্টা যে বেশি ফলপ্রসূ হবে সেটা তো সবাই জানি। কার সাথে যোগাযোগ করবেন?স্থানীয় উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ? হ্যাঁ, বেটার অপসন, আর কি আছে? ইউনিয়ন পরিষদ? হুম ভালো কথা, এনজিও, উপজেলা পরিষদ, মূল কথা যেকোনো সরকারি বেসরকারি সংস্থা। আর কি হতে পারে? ন্যাশনাল হেল্প ডেস্ক নাম্বার, ৯৯৯, আপনার সমস্যা টা জানান। অবগত করুন সবাইকে। হ্যাঁ,দারুণ সব উপায় আছে। হয়ত আপনি এসব জানতেনো বটে কিন্তু অজ্ঞতাবশত যে দ্বিধা তৈরি হয় সেটায় আলোবর্শিত করা তো প্রয়োজনীয়।
কারণ আপনি যদি নাই জানেন যে কিভাবে পরিত্রাণ পাবেন, তাহলে মনুষ্য দুর্বল হৃদয় টা আপনাকে চালনা করবে। যা কাম্য নয়।
আচ্ছা বিষদ করি ব্যাপার টা,
বিয়ে টা আটকানোর প্রয়াস করতে গেলে যে ঘটনাটা বললাম সেটার বিবচনায় আপনার মাথায় নিশ্চয় প্রশ্ন জাগবে, মেয়েটির কি হবে পরে?
হ্যাঁ, দ্বিধার ফার্স্ট ফেজ। এখন যদি আমরা এটি নিশ্চিত করতে পারি যে তার ভবিষ্যতে সে সেল্ফ-এম্প্লোয়েড বা আত্মনির্ভরশীল একজন হতে পারবে তাহলে দ্বিধার ঘরে একটু আলোর সঞ্চার হয়। যেমন- মেয়েটি কারিগরি শিক্ষা নিয়ে কোনো কাজ শুরু করলো বা বুটিক শিল্প / দর্জির কাজ ইত্যাদি শিখে কোনো কাজের সাথে যুক্ত করলো নিজেকে। তখন তাহলে মানবতার থেকে দ্বিধার সৃষ্টি হবার কোনো কারণ থাকবে না। সেজন্যই প্রথমত নিশ্চিত করতে হবে তদ্রুপ সেবা পাবার যথোপযোগী ব্যবস্থা, দারিদ্রমোচন কার্যক্রম, এবং এগুলোর চেয়ে বড় কথা সচেতনতা – এসব বিষয় নিয়ে। যখন আমরা দ্বিধার সকল কারণ উৎরে পার হতে পারবো তখন মানবতা থাকবে আইনের পক্ষে, কারণ মানবতা থেকেই আইনের সৃষ্টি।
আর তাহলে আপনি যদি একজন সচেতন ব্যক্তি হয়ে থাকেন তবে ঘটনায় উল্লেখিত মেয়েটি হয়ত এখন একজন আত্মনির্ভরশীল মানুষ, হয়তবা এখন সে আপনার জন্য দোয়া করছে।
চোখ কান খোলা রাখুন, আর সচেতন থাকুন,
আইন মানবতারপথেই থাকবে,
মানবতা আইনের পাশে চলবে।