ইউএনও’র প্রচেষ্টায় সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে ১১ মাসে ১০০টি বাল্যবিয়ে বন্ধ


Admin প্রকাশের সময় : ১৯/০৬/২০২১, ২:২৭ PM
ইউএনও’র প্রচেষ্টায় সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে ১১ মাসে ১০০টি বাল্যবিয়ে বন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সিরাজগঞ্জে বেলকুচিতে ইউএনও’র প্রচেষ্টায় ১১ মাসে ১০০ ‍শিশুর বাল্যবিয়ে বন্ধসহ পুরো সিরাজগঞ্জে ৩৫০টি বাল্যবিয়ে বন্ধ হয়েছে। বাল্যবিয়ে হলে শিশু কিশোরীর স্বপ্ন চাপা পড়ে যায় বলে মনে করেন সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা  মো. আনিসুর রহমান। মো. আনিসুর রহমান ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে ২০১৮ এর জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত সিরাজগঞ্জ জেলায় প্রায় ৩৫০টি বাল্যবিয়ে বন্ধ করেছেন।এরমধ্যে চৌহালি উপজেলায় ৩৪টি, সিরাজগঞ্জ সদরে ২১৬টি, বেলকুচিতে ১০০টি ।এদের মধ্যে ২৭জন ছেলেরও বাল্যবিয়ে বন্ধ করেছেন তিনি। গত শুক্রবার (১৮ জুন) রাতে বেলকুচি পৌরসভার চালা মধ্যপাড়া এলাকায় অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রীর বাল্যবিয়ে বন্ধ করা মধ্য দিয়ে জেলায় ৩৫০টি ছাত্রীকে বাল্যবিয়ে থেকে রক্ষা করেন তিনি। স¤প্রতি বাল্যবিয়ে নিয়ে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় তিনি তার পরিকল্পনা ও কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলেন।  

তিনি বলেন, “আমি প্রথমে সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) এসিল্যান্ড হিসেবে যোগদান করি এবং সেখান থেকেই সিরাজগঞ্জ জেলায় বাল্যবিয়ে বন্ধের কাজ শুরু করি। এরপর সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা ও চৌহালি উপজেলার ভূমি কমিশনার এবং এরপর পদোন্নতি পেয়ে ২০২০ সালের শুরুর দিকে এই জেলার বেলকুচি উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করি। শুরু থেকে সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন স্কুল কলেজে গিয়ে ছাত্র ছাত্রীদের বাল্য বিয়ে সম্পর্কে সচেতন করে আসি এবং আমার ফোন নম্বর দিয়ে আসি এবং স্থানীয় লোকদের কাছেও আমার নম্বর দিয়ে আসি।”

তিনি আরও বলেন, এরপর থেকে যেখানেই বাল্যবিয়ে হয় সে এলাকার শিশু-কিশোরসহ স্থানীয় সমাজসচেতন ব্যক্তিরা আমাকে ফোন কল বা মেসেজের মাধ্যমে বিষয়টি জানান। আমি এবং আমার সহযোগী স্টাফদের আন্তরিক সহযোগিতায় দ্রæত ঘটনাস্থলে চলে যাই।  ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে বর কনের অভিভাবককে দÐিত করে ১৮ বছরের আগে বিয়ে দেবে না বলে মুচলেকা নেন তিনি। 

তবে এ কাজে ঝুঁকি আছে জানিয়ে তিনি বলেন, বাল্যবিয়ে বন্ধের সময় স্থানীয়দের ভূমিকা প্রশংশনীয় হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাকে প্রতিক‚ল পরিবেশের সম্মুখীন হতে হয়েছে। তিনি বলেন, “অনেকে মানুষ মনে করেন মেয়েকে বিয়ে দিলেই তারা বেঁচে যাবেন, বাল্য বিয়ে দেওয়া যে একটি অপরাধ এ বিষয়টি তারা বোঝার চেষ্টা করেন না। সে ক্ষেত্রে আমাদের প্রতিক‚ল পরিবেশ এর সম্মুখীন হতে হয়।”  

বাল্যবিয়ে বন্ধের উদ্দেশ্যে সম্পর্কে তিনি বলেন, “বাল্যবিয়ে বন্ধে এতটা জোর দেওয়ার পেছনে আমার কিছু উদ্দেশ্য রয়েছে। দেশের মোট জনশক্তির অর্ধেক হলো নারী। কিন্তু আমরা যদি এই নারী শক্তিকে  শিক্ষিত ও দক্ষ করে গড়ে তুলতে না পারি তবে সরকারের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল পূর্ণ হবে না। শুধু তাই নয় এ বাল্য বিয়ের ফলে একটি শিশুর স্বপ্ন মাটিচাপা দেওয়া হয়। স্বাস্থঝুঁকি তো থাকছেই। “বাল্য বিয়ে নির্মূল করতে পারলে নারীরা আর বোঝা থাকবে না, তারা জনসংখ্যা থেকে জন শক্তিতে রূপ নিয়ে দেশ ও দশের সেবা করতে পারবে, মাতৃমৃত্যু কমে যাবে, শিশুমৃত্যু কমে যাবে, নারীর ক্ষমতায়ন বাস্তবায়িত হবে।”  

বাল্যবিয়ে বন্ধের পাশাপাশি কিশোরীদের নিরাপত্তার বিষয়ে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে তিনি বলেন, “আমি ইভিটিজিং এর বিরুদ্ধে অনেকগুলো অভিযান পরিচালনা করেছি। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অনেককে জেল জরিমানা করেছি। এমনকি স্কুল ছুটির সময় আমি নিজে ছদ্মবেশে বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে অবস্থান করি এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করি।”    

মেয়েরা সচেতন হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে সবচেয়ে বিষ্ময়ের বিষয় এই যে অনেকগুলো মেয়ে তাদের নিজেদের বাল্যবিয়ে নিজেরাই বন্ধ করেছে।

তার কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে তিনি বলেন, “আমি জেলার ৫০-৬০টি বালিকা বিদ্যালয় ও কম্বাইন্ড স্কুলে বাল্য বিবাহ নিরোধ কমিটি করে দিয়ে এসেছি। সাথে আমার মোবাইল নম্বর, জাতীয় জরুরী সেবার নম্বরগুলো তাদের কাছে দিয়ে এসেছি।”  

বাল্যবিয়ের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, পরিবারের দরিদ্রতাকে প্রধান মনে করছেন।তিনি আরও বলেন, যেসব কন্যা শিশুদের বাবা মা আর ভরণ পোষণ দিতে পারছেন না তাদের বাল্যবিয়ে বন্ধ করার পর এখন আমি তাদের মধ্যে তিন জনের দায়িত্ত¡ নিজে বহন করছি। “এদের একজন ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়, একজন মাওলানা ভাষানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এ লেখাপড়া করছে।”

তিনি আরও বলেন, আমরা ইতোমধ্যেই বাল্যবিয়ে অনেকটা কমিয়ে এনেছি। সকলের এই সহযোগিতা অব্যহত থাকলে সিরাজগঞ্জ জেলাকে বাল্য বিবাহ মুক্ত ঘোষণা করতে পারব।