শাহজাহান ইসলাম লেলিন,নীলফামারি:ভ্রমন ভালো লাগে না এমন মানুষ খুজে পাওয়া যাবে না। সকলেই চায় একটু প্রাণখুলে শ্বাস নিতে, সাগরের উত্তল ঢেউ উপভোগ করতে। আমার বয়স ১৩, তখন আমি অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি। সময়াটা ছিল শীতকালের শেষের দিকে রওনা দিলাম কিশোরগঞ্জ, নীলফামারি থেকে তিস্তার পথে।
শুনেছি তিস্তা এখানে খরস্রোতা নয়। পাহাড়েরর পাদদেশে এখানে নদী প্রশস্ত, ধীর-স্থির। চারপাশে অরণ্য। শান্ত, সবুজ, বিস্তৃত এই প্রকৃতির মাঝে শীতের শুরুতেই মধ্য এশিয়া, ইউরোপ ও পৃথিবীর অন্যান্য জায়গা থেকে দল বেঁধে চলে আসে পরিযায়ী পাখির দল। নভেম্বর থেকে মার্চ পযন্ত এখানে জলে, ডাঙায়, আকাশে সব জায়গায় পাখি। আর এটাই গজলডোবার আকর্ষণ।
আরও শুনেছিলাম তিস্তার পানি উত্তরবঙ্গের ধান চাষে অনেক উপকারী। তিস্তার ক্যানেলে বরাবর উত্তরবঙ্গে বিরাজমান তিস্তার পানি দিয়ে উত্তরবঙ্গের মানুষ ইরি ধানের পানির চাহিদা পূরন করেন।
কিশোরগঞ্জ থেকে জলডাকা এসে পৌছালাম প্রায় ১ঘন্টার যাত্রাপথ ছিলো স্টেশনের ওয়েটিং রুমে ফ্র্রেশ হয়ে, তিস্তার দিকে যাত্রা শুরু করেছিলাম। তিস্তা ব্যারেজে গাড়ি থেকে নামতেই চোখে পড়ল দূরে পাখিদের ওড়াউড়ি। উদ্দেশ্য ছিল নদীর বুকে ভাসতে ভাসতে পাখিদের ছবি তোলা। যাঁরা তিস্তায় মাছ ধরেন, তাঁরাই নৌকা করে নিয়ে যান নদীতে। পর্যটকদের নিয়ে যেতে যেতে এখন তাঁরা মাঝি কাম গাইড। প্রায় সব পাখির নাম তাঁদের কণ্ঠস্থ। এমনকি কোন পাখির ঝাঁক কোথায় থাকতে পারে, সে আন্দাজও তাঁরা দিতে পারেন। তবে এখানকার নৌকাগুলি বেশ সরু। মাঝি ছাড়া দু’জনের বেশি জায়গা হয় না একটায়। দাঁড় টেনে কিছু দূর এগোতেই চোখে পড়ল একঝাঁক রাডি শেলডাক। তাদের কমলা ডানা ফ্রেমবন্দি করতেই চোখ চলে গেল দূরে ভেসে যাওয়া আর একদল নর্দার্ন পিনটেলের দিকে। তাদের থেকে চোখ সরাতেই উড়ন্ত মালাড। কিছু দূর যাওয়ার পরে দেখি, তিস্তার নীল জল আর সবুজ পাহাড়ের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে শ্বেতশুভ্র কাঞ্চনজঙ্ঘা! এমন চমৎকার ল্যান্ডস্কেপ চুপ করিয়ে দিল কিছুক্ষণের জন্য। অসাধারণ ছিলো তিস্তা ভ্রমণ।
আপনার মতামত লিখুন :