হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে কন্যা শিশুকে ট্রাক থেকে ছুড়ে ফেলে হত্যার অভিযোগে বাবার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন শিশুটির মা।
হত্যা মামলা দায়েরের একদিন আগে গত মঙ্গলবার সকালে উপজেলার কাগাপাশা গ্রামের একটি ব্রীজের নিচ থেকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে বানিয়াচং থানা পুলিশ।
পরে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে শিশুটিকে দাফন করা হয়। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিশুটির ছবি দেখে সন্তানকে চিনতে পারেন মা। শুক্রবার তিনি শুক্রবার তিনি ইমরান ও তাঁর ট্রাকের সহকারী বাদলকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেছেন। এদিকে ঘটনাটি জানাজানি হলে এলাকায় ব্যাপক আলোচনার সৃস্টি হয়। দোষীদের শনাক্ত করে দৃস্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান এলাকাবাসী।
পুলিশ জানায়, ১৫ মাস বয়সী ওই কন্যাশিশুটির মরদেহ উদ্ধারের পর বেওয়ারিশ হিসেবে লাশ দাফনের পরদিন থানায় এসে এক নারী জানিয়েছেন কন্যাশিশুটি তাঁর সন্তান। তার স্বামী সন্তানকে ট্রাক থেকে ছুড়ে ফেলে হত্যা করেছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
তদন্তে জানা গেছে, ইমরান সিলেট থেকে পাথর বোঝাই করে ট্রাক নিয়ে হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জে যাচ্ছিলেন। এ ট্রাকেই তিনি স্ত্রী ইয়াসমিন ও সন্তানের নিয়ে আসেন। পথিমধ্যে কাগাপাশা এলাকার হাওর এসে ১ মাসের কন্যা সন্তানটিকে ট্রাক থেকে ফেলে দিলে সেখানেই হয়ত শিশুটির মৃত্যু হয়। প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে তাই মামলা নেয়া হয়েছে।
মামলার এজাহার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সিলেটের সারিঘাট এলাকার ট্রাকচালক ইমরান আহমদ তিন বছর আগে জেলার জৈন্তাপুর উপজেলার গর্দান গ্রামের ইয়াসমিন বেগমকে (৩০) বিয়ে করেন। ইয়াসমিনের আগের স্বামীর সংসারে তিন বছরের এক ছেলে রয়েছে। এদিকে ইমরানের সঙ্গে বিয়ের পর ইয়াসমিনের এক মেয়ে হয়, যার নাম রাখা হয় অ্যানি (১৫ মাস)। কিন্তু স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দাম্পত্য কলহ দেখা দিত প্রায় সময়ই। একপর্যায়ে কয়েক মাস আগে ইমরান তালাক দেন ইয়াসমিনকে। স্থানীয় মুরব্বিদের মধ্যস্থতায় মেয়ের ভরণপোষণের জন্য প্রতি মাসে ইয়াসমিনকে দুই হাজার টাকা দিতে রাজি হন ইমরান। সে অনুয়ায়ী ইমরান প্রতি মাসে এই টাকা দিয়ে আসছিলেন।
গত মাসে মেয়ের ভরণপোষণের টাকা না দেওয়ায় গত ২৯ জানুয়ারি ইয়াসমিন মুঠোফোনে ইমরানকে মেয়ের অসুস্থতার কথা জানান।
ইমরান তখন জানান, সন্তানকে তিনি নিজে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাবেন। সে অনুযায়ী গত সোমবার রাত সাড়ে ৯টায় ইমরান সিলেটের শাহপরান থানার দাসপাড়া এলাকা থেকে ইয়াসমিন বেগম ও তাঁর দুই সন্তানকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ট্রাকে তোলেন। ইমরান নিজেই ট্রাকটি চালাচ্ছিলেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বাদল নামের এক সহকারী। ট্রাক নিয়ে অচেনা পথে যাওয়া দেখে ইয়াসমিনের সন্দেহ হয়। এ নিয়ে তিনি ইমরানের সঙ্গে ঝগড়া শুরু করেন। একপর্যায়ে ইমরান মায়ের কোলে থাকা শিশু অ্যানিকে ছিনিয়ে নিয়ে জানালা দিয়ে ছুড়ে মারেন। পরে দ্বিতীয় শিশু সাফিকে (আগের স্বামীর সন্তান) ফেলে দিতে চান। তবে ইয়াসমিন হাতে–পায়ে ধরে ওই শিশুকে রক্ষা করেন। পুলিশের কাছে ইয়াসমিন দাবি করেন, ২৯ জানুয়ারি গভীর রাতে একটি সেতুর কাছে এ ঘটনা ঘটে। রাত বেশি হওয়ায় জায়গাটি তিনি চিনতে পারেননি। পরে ইমরান ট্রাকে করে ভোরের দিকে সিলেটের টিলাগড় এলাকায় তাঁকে ফেলে চম্পট দেন।
শিশুটির মা ইয়াসমিনের জানান, ওই দিন সকালে সিলেটের শাহপরান থানায় গিয়ে তিনি পুরো ঘটনা জানালেও পুলিশ তা আমলে নেয়নি। পরে ফেসবুক ও সংবাদপত্রের মাধ্যমে জানতে পারেন শিশুর লাশ উদ্ধার বিষয়টি। পরে বাধ্য হয়ে বানিয়াচং থানায় মামরা দায়ের করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বানিয়াচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসাইন জানান, প্রাথমিক তদন্তে শিশুর মায়ের অভিযোগের সত্যতা রয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। মামলাটি বানিয়াচং থানার এসআই সাদরুল ইসলাম তদন্ত করছেন। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা পলাতক। তাঁদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তিনি জানান, লাশের ময়না তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়া গেলে মৃত্যুর কারণ আরো নিশ্চিত হওয়া যাবে।
আপনার মতামত লিখুন :