শিশু বার্তা ডেস্ক:
নেত্রকোণার কলমাকান্দা ও বারহাট্টার পর ইউপি চেয়ারম্যান শাহ মাহবুব মোর্শেদ কাঞ্চনের ফাঁসির দাবিতে নিজ এলাকাবাসী মানববন্ধন করেছে। কিশোরী মারুফা আক্তার ধর্ষণের পর হত্যাকারী ও তার সহযোগীদের ফাঁসির দাবিতে শনিবার (১৬মে) দুপরে উপজেলার সিংধা ইউনিয়নের আলোকদিয়া ব্রীজের পাশে ঘন্টাব্যাপী এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়্।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখে, ছাত্রনেতা ইলিয়াস আহমেদ, আরমান হোসেন বাক্কী, সাবেক সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার সন্ধ্যা রানী রায়সহ অন্যরা। এ সময় বক্তারা বলেন, দুর্বল এফআইআর-এর কারণেই চেয়ারম্যান কাঞ্চন ধর্ষণ করার সাত দিনের মধ্যে জামিন পেয়ে গেছে৷ ধর্ষক ও খুনীকে যে বা যারাই সহায়তা দেয় তারা দেশের শত্রু, বিবেকের শত্রু৷ এই দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য সকলকে আহ্বান জানান বক্তারা। এছাড়া, অভিযুক্ত সিংধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ মাহবুব মোর্শেদ কাঞ্চনের ফাঁসির দাবি এবং সেই সাথে জেলা আওয়ামীলীগের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদকের পদ থেকে বহিস্কারেরও দাবি জানান বিক্ষোব্ধ জনতা।
এ দিকে রহস্যজনক মৃত্যুর সাথে জড়িত চেয়ারম্যান শাহ মাহবুব মোর্শেদ কাঞ্চন ও তার সহযোগীদের নিয়ে ফেইজবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে অভিযুক্তদের সব্বোর্চ্চ শাস্তির দাবীতে তীব্র আন্দোলন গড়ে উঠেছে। এর আগেও বিভিন্ন অনিয়মের কারণে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী স্বাক্ষরিত ১৯ নভেম্বর ২০১৯ তারিখে লিখিত চিঠির মাধ্যমে সাময়িক বরখাস্ত করেন এই চেয়ারম্যানকে।
নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টা উপজেলার সিংধা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহ মাহবুব মোর্শেদ কাঞ্চনের বাসার গৃহকর্মী মারুফা(১৪) রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট এখনো দেয়নি সদর হাসপাতাল। তবে মারুফার মায়ের অভিযোগ মেয়েকে ধ’র্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে চেয়ারম্যান।মারুফার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে আঘাত ও কামড়ের চিহ্ন রয়েছে, যৌনাঙ্গে আঘাত করে নির্মম ভাবে হত্যা করেছে।
নিহত গৃহকর্মী মারুফা আক্তারের মা আকলিমা আক্তার বলেন, আমার মেয়েকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে।মারুফার শরীরের আঘাতের চিহ্ন ছিল। আমি ধর্ষণের আলামত দেখেছি। আমি গরিব মানুষ, নিজেও ঢাকায় মানুষের বাসায় কাজ করি। আমি এর বিচার চাই। এদিকে পুলিশ ওই দিন মারুফার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। তবে মারুফার মায়ের অভিযোগ মেয়েকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে চেয়ারম্যান।মারুফার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে আঘাত ও কামড়ের চিহ্ন রয়েছে, যৌনাঙ্গে আঘাত করে নির্মম ভাবে হত্যা করেছে।
নিহত গৃহকর্মী মারুফা আক্তারের মা এ ঘটনায় মারুফার মা আকলিমা সোমবার (১১মে ) সন্ধ্যায় বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চেয়ারম্যানকে আটক করে। আদালতে হাজির করা হলে খুব দ্রুতই তিনি জামিন পেয়ে যায়, এদিকে চেয়ারম্যানের লোকজন মানববন্ধনে বাধা দিলে কয়েকমিনিটে তারা মানববন্ধন শেষ করে দেন। মানববন্ধনকারীরা অভিযোগ করেন, চেয়ারম্যান মোর্শেদ কাঞ্চনের ঘনিষ্ঠ আলোকদিয়া গ্রামের তাহের মিয়া ছেলে রহিম মিয়া, আনোয়ার আলী মাস্টারের ছেলে স্বপন মিয়া ও ধনপুর গ্রামের ওয়াহেদ আলীর ছেলে মোতাহার মিয়া মানববন্ধনে বাধা দেয়। কাঞ্চন চেয়ারম্যানকে ‘ভাল মানুষ’ ও ‘নিদোর্ষ’ দাবি করে তারা মানববন্ধনকারীদেরকে গালাগাল করেন ও মারধরের হুমকি দেয়।
উল্লেখ্য, গত ৯ মে শনিবার বিকালে বারহাট্টার সিংধা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহ মাহবুব মোর্শেদ কাঞ্চনের মোহনগঞ্জের বাসায় রহস্যজনক মৃত্যু হয় গৃহকর্মী মারুফা আক্তারের। ফাঁস লেগে আত্মহত্যা করেছে বলে জানালেও পুলিশকে না জানিয়ে চেয়ারম্যান নিজেই মারুফার লাশ নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যান। গৃহকর্মী মারুফার শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখে এবং বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হলে নিহতের মায়ের আবেদনে ময়না তদন্তের জন্য নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। এখনো রিপোর্ট প্রকাশ হয়নি। ১১ মে সোমবার মারুফার মা আকলিমা আক্তারের অভিযোগের ভিত্তিতে ওইদিনই মামলা নিয়ে চেয়ারম্যানকে আটক করে মোহনগঞ্জ থানা পুলিশ। পরে ১২ মে তাকে আদালতে পাঠানো হয়। এর দুইদিন পর ১৪ মে আদালত থেকে জামিনে বেরিয়ে আসেন চেয়ারম্যান মাহবুব মুর্শেধ কাঞ্চন। এ ঘটনায় চেয়ারম্যানের শাস্তির দাবিতে পুরো জেলা জুড়েই বিক্ষোভ অব্যাহত আছে।
আপনার মতামত লিখুন :