ব্যক্তিগত সামাজিক দায়বদ্ধতা মুলক কাজ হিসাবে আমার আয়ের একটি অংশ বিভিন্ন সময় সমাজ কল্যাণে ব্যয় করে থাকি।সব ধরনের সমাজকল্যাণ মূলক কাজের মধ্যে বৃক্ষ রোপনকে আমি প্রিয় কাজ হিসেবে গ্রহন করেছি।কারন কুরআন, হাদিস ও বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তক এবং বাস্তবিক জীবন থেকে জানতে পেরেছি যে বৃক্ষরোপন একটি মহৎ কাজ হিসাবে পরিবেশের স্বাভাবিক ভারসাম্য রক্ষায় ও দূষণমুক্ত সবুজ পরিবেশ তৈরিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শুধু পরিবেশ রক্ষার জন্যই নয়; বরং ধর্মীয় কারণেও মানুষকে বৃক্ষরোপণ করতে হয়। আল্লাহ তায়ালা মানুষ সৃষ্টি করে ভূপৃষ্ঠের প্রয়োজনীয় জীবন উপকরণ হিসাবে ফলবান বৃক্ষরাজি ও সবুজ-শ্যামল বনভূমির দ্বারা একে সুশোভিত ও অপরূপ সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছেন। গাছপালা দ্বারা ভূমণ্ডল ও পরিবেশ-প্রাকৃতিক ভারসাম্য সংরক্ষণ করেছেন। পবিত্র কোরআনে তাই ঘোষণা এসেছে—‘আমি ভূমিকে বিস্তৃত করেছি ও তাতে পর্বতমালা স্থাপন করেছি এবং তাতে নয়নাভিরাম সর্বপ্রকার উদ্ভিদ উদ্গত করেছি। আর আমি আকাশ থেকে কল্যাণময় বৃষ্টিবর্ষণ করি এবং এর দ্বারা উদ্যান ও পরিপক্ব শস্যরাজি উদ্গত করি, যেগুলোর ফসল আহরণ করা হয়। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে প্রকৃতির যতগুলো নিয়ামত দান করেছেন, তন্মধ্যে শ্রেষ্ঠতম হচ্ছে বৃক্ষরাজি। সৃষ্টিকুলের জীবন-জীবিকা ও বৃহৎ কল্যাণের জন্য গাছপালা, বৃক্ষলতা এবং মৌসুমি ফল-ফসলের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।মহান আল্লাহর সৃষ্টি বৃক্ষরাজি যে কত বড় নিয়ামত পবিত্র কোরআনে একাধিক আয়াত থেকে তার প্রমাণ প্রতীয়মান। এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হচ্ছে—‘তারা কি লক্ষ করে না, আমি উষর ভূমির ওপর পানি প্রবাহিত করে তার সাহায্যে উদগত করি শস্য, যা থেকে তাদের গবাদি পশু এবং তারা নিজেরা আহার গ্রহণ করে। মানবদেহের জন্য খাদ্য হিসেবে বৃক্ষের ফলমূল বিশেষ উপকারী, তাই আল্লাহ এটিকে সৃষ্টির প্রতি বিশেষ নিয়ামত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এ ব্যাপারে ঘোষণা এসেছে—‘তিনি তোমাদের জন্য বৃষ্টির দ্বারা উৎপাদন করেন ফসল, জয়তুন, খেজুর, আঙুর এবং সর্বপ্রকার ফলমূল। নিশ্চয়ই এতে চিন্তাশীলদের জন্য রয়েছে নিদর্শন।
মানবদরদী রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.) পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষরোপণ ও তা পরিচর্যার কথা উল্লেখ করে গেছেন।ইসলামে ফলদ বৃক্ষরোপণ ও ফসল ফলানোকে বিশেষ সওয়ারের কাজ হিসেবে সদকায়ে জারিয়া বা প্রবহমান দানরূপে আখ্যায়িত করা হয়েছে। কেননা ব্যক্তি যদি একটি বৃক্ষরোপণ ও তাতে পরিচর্যা করেন, তাহলে ওই গাছটি যত দিন বেঁচে থাকবে এবং মানুষ ও অন্যান্য জীবজন্তু যত দিন তার ফল বা উপকার ভোগ করতে থাকবে, তত দিন ওই ব্যক্তির আমলনামায় পুণ্যের সওয়াব লেখা হতে থাকবে। সদকায়ে জারিয়ার জন্য ছায়াদানকারী ফলবান বৃক্ষই তুলনামূলক বেশি উপকারী। তাই রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘোষণা করেছেন—‘যদি কোনো মুসলমান একটি বৃক্ষরোপণ করে অথবা কোনো শস্য উৎপাদন করে এবং তা থেকে কোনো মানুষ কিংবা পাখি অথবা পশু ভক্ষণ করে, তবে উৎপাদনকারীর জন্য সদকাহ (দান) স্বরূপ গণ্য হবে। বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যা করতে নির্দেশ দিয়ে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যদি নিশ্চিতভাবে জানো যে কিয়ামত এসে গেছে, তখন হাতে যদি একটি গাছের চারা থাকে, যা রোপণ করা যায়, তবে সেই চারাটি রোপণ করবে। হজরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত) একদা নবী করিম (সা.) হজরত সালমান ফারসি (রা.)-কে মুক্তির জন্য তাঁর মালিকের কাছে গেলেন। মালিক মুক্তিপণ হিসেবে ১০০ খেজুর গাছ রোপণের শর্তারোপ করলে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাতে রাজি হলেন এবং নিজ হাতে ১০০ খেজুর গাছের চারা রোপণ করে তাঁকে মুক্ত করলেন। এমনিভাবে পবিত্র কোরআন ও হাদিসে বৃক্ষরোপণের প্রতি মানুষকে বিভিন্নভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে।কুরআন ও হাদিসের আলোকে শিক্ষা গ্রহন করে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন,কার্বন নিঃসরন, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদির ব্যাপকতা রোধ করে পৃথিবীকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বসবাসের উপযোগী সবুজ পরিবেশ গড়ার প্রত্যয়ে ২০১০ সালে “বৃক্ষ যার যার অক্সিজেন সবার “স্লোগানে সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার বড়হর ইউনিয়নের আমার নিজ গ্রাম ডেফলবাড়ি কবরস্থান প্রাঙ্গণে ১০০ টি সবুজ চারা রোপনের মাধ্যমে আমি ব্যক্তিগতভাবে আজীবন মেয়াদি বৃক্ষরোপন কর্মসূচী হাতে নিয়েছে।প্রাথমিকভাবে “সবুজ বৃক্ষ রোপন করি সবুজ সিরাজগঞ্জ জেলা গড়ি ” প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে রেখে ইতিমধ্যে নিজ এলাকার বেশকিছু স্কুল কলেজ, মসজিদ,মাদ্রাসা,ও কবরস্থান প্রাঙ্গণে বৃক্ষরোপন করেছি এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে চারা বিতরণ করেছি।পর্যায়ক্রমে সবার সাথে সিরাজগঞ্জ জেলার প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ,কবরস্থান, হাট-বাজার,খেয়া ঘাট ও জন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সবুজ চারা রোপন করে সবুজ সিরাজগঞ্জ গড়তে চাই।যেহেতু বৃক্ষবিহীন এক মুহূর্তও আমরা কল্পনা করতে পারি না। বৃক্ষ না থাকলে অক্সিজেন থাকবেনা। আর অক্সিজেন না থাকলে কিছুই থাকবেনা।তাই আসুন, সবাই যার যার অবস্থান থেকে প্রচুর পরিমাণ বৃক্ষরোপণের উদ্যোগ গ্রহণ করে সবুজ সিরাজগঞ্জ গড়ার পাশাপাশি সবুজ বাংলাদেশ গড়ে তুলি।
আপনার মতামত লিখুন :