সচেতন হই করোনায়, সুস্থ থাকি নির্ভাবনায়
Admin
প্রকাশের সময় : ১৭/০৩/২০২০, ১২:৩৭ AM
মাহীব রেজা, ঢাকা:
করোনা, নামটা শুনলেই এখন আঁতকে উঠতে হয়। কারণ সম্প্রতি এই ভাইরাসটি কেড়েছে বিশ্বের প্রায় ৬ হাজার মানুষের প্রাণ। চীনের উহানে প্রথম প্রাদুর্ভাব দেখা দিলেও এর প্রভাব ছড়িয়েছে বিশ্বের ১৬২ টি দেশে (এই প্রতিবেদনটি লেখার সময় পর্যন্ত)। বিশ্বের প্রায় ১ লাখ ৭৫ হাজারের বেশি মানুষ ভাইরাসটি দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন। যদিও সুস্থ হয়েছেন প্রায় ৭৮ হাজার মানুষ যা প্রায় ৯২ শতাংশ।
অতি সাধারন গোছের এ ভাইরাসটি মানুষ থেকে মানুষে ছড়াচ্ছে। এর ভয়াবহতা উপলব্ধি করে সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটি কে ‘বৈশ্বিক মহামারি’ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
আমাদের দক্ষিন এশিয়া প্রধানত নাতিশীতোষ্ণ হওয়ায় ভাইরাসটির সংক্রমন খুব একটা হবে না বলে ধারণা করা হলেও সবাইকে চমকে দিয়ে ইতোমধ্যে ভারতে দুইজনের প্রাণ কেড়েছে করোনা। আক্রান্ত হয়েছে ১২৯ জন। শেষ খবর পাওয়া সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে আফগানিস্তানে ২১ জন, ভূটানে ১ জন, পাকিস্তানে ১৩৬ জন, শ্রীলঙ্কায় ২৮ জন, মালদ্বীপে ১৩ জন ও আমাদের বাংলাদেশে মোট ৮ জন করোনা রোগি শনাক্ত করা হয়েছে। সার্ক সরকার প্রধানগণের যৌথ ভিডিও কনফারেন্সে মোট ১ মিলিয়ন ডলারের জরুরি তহবিল গ্রহণ করা হয়েছে।
আমাদের মতো ঘনবসতির দেশে করোনা ছড়ানোর সম্ভাবনা বেশি। কারণ, করোনা মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায়। যদিও আতঙ্কিত হবার কোনো কারণ নাই। কারণ এই ভাইরাসটি নিজেদের ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা, শিষ্ঠাচার মেনে চললেই প্রতিরোধ করা সম্ভব।
ভাইরাসটি স্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায়। একাধিক পরিক্ষায় একই ফল এসেছে যে ভাইরাসটি বায়ুবাহিত নয়। হাঁচি-কাশি বা মানবদেহের যেকোনো ফ্লুইডের মাধ্যমে ভাইরাসটি সংক্রমিত হতে পারে। তাই একটু সচেতন হলেই আমরা এই ভাইরাসটি মোকাবেলা করতে পারব।
আমাদের করনীয় কি হবে?
· আমরা হাঁচি-কাশি দেবার সময় রুমাল অথবা টিস্যুপেপার দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলব। না হয় কনুইয়ের মাঝখানে মুখ রেখে হাঁচি-কাশি দেব।
· হাত পরিষ্কার না করে কিছু স্পর্শ করব না। হাত পরিষ্কারের জন্যে সাবান, স্যানিটাইজার, রাবিং এলকোহল ব্যবহার করা যেতে পারে। হাত বিশ সেকেন্ড ধরে পরিষ্কার করতে হবে।
· আমরা যথাসম্ভব জনসমাগম এড়িয়ে চলার চেষ্টা করব। কারো সাথে দেখা হলে হাত না মিলিয়ে দূর থেকে সম্ভাষণ করব।
· কিছুক্ষণ পরপর পানি পান করব।
· পশুপাখির মাধ্যমে ভাইরাসটির সংক্রমন এখনো পরীক্ষিত না হলেও যথাসম্ভব পশুপাখির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলব।
· যদি করোনার উপসর্গের সাথে মিলে যায় তবে জরুরী ভিত্তিতে ডাক্তারের পরামর্শ নেবো। এজন্য ন্যাশনাল হেল্প লাইন ৯৯৯ এ কল করে আইইডিসিআরের হটলাইনে যোগাযোগ করলে জরুরি পরামর্শ পাওয়া যাবে।
· অসুস্থ অবস্থায় মাস্ক ব্যবহার করব। নিজে নিজেই হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকব। এর মানে হচ্ছে নিজেকে সবার থেকে আলাদা রাখব।
নভেল করোনার উপসর্গ কি?
· সর্দি-কাশি, গলাব্যথা ও পরবর্তিতে শ্বাসকষ্ট
· জ্বর, তাপমাত্রা ১০৭ এর উপরে
· নিউমোনিয়া
· ডায়রিয়া
একটু সতর্ক হলেই এমন ভাইরাস থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা সম্ভব। ভাইরাসটি একদিকে যেমন জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে, অন্যদিকে আমাদের সচেতন হতে বাধ্যও করছে। বিশ্বের অনেক দেশই ভাইরাসটি মোকাবেলা করে সফল হয়েছে। এর প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সক্ষম হয়েছে।
ভাইরাসটি সবার জন্যে প্রাণঘাতি নয়। প্রবীণ ও শিশুদের জন্যে ভাইরাসটি মারাত্মক হয়ে উঠেছে। এখন পর্যন্ত এন্টিবায়োটিক ছাড়া ভাইরাসটির প্রতিষেধক নেই। তাই সবাইকে শিশু স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবতে হবে। অভিভাবক গণ শিশুদের পরিচ্ছন্নতায় গুরুত্ব দিলে শিশুরা এ থেকে নিরাপদ থাকতে পারবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করেছে। এসময় শিশু ও শিক্ষার্থীরা পরিচ্ছন্ন পরিবেশে নিজেদের সুরক্ষিত রাখলে এ ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকতে পারবে।
আসুন, আমরা সচেতন হই করোনায়, সুস্থ থাকি নির্ভাবনায়।
Post Views:
108
আপনার মতামত লিখুন :