ওরা কি হবে অন্ধকার গলির পতিতাপল্লীর যৌনকর্মী?


Admin প্রকাশের সময় : ১৫/০৩/২০২০, ১:২২ AM
ওরা কি হবে অন্ধকার গলির পতিতাপল্লীর যৌনকর্মী?

এস.এম. মানজুরুল ইসলাম সাজিদ, বাগেরহাট:
আমাদের সমাজের অনেকে আছেন যারা কিনা পতিতা পল্লির শিশুদের নিয়ে নানা রকমের মন্তব্য করেন। এই শিশু গুলোকে সমাজের থেকে আলাদা করে রাখেন। ফলে অবহেলায় এই শিশু গুলোর ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যায়। এভাবে এদের আলাদা করে দিয়ে এক সময় নষ্ট হয়ে যেতে দেয় সমাজ। ফলে এরা একদিন আর উঠে আসতে পারে না। অপরাধ জগতে পা দিয়ে হারিয়ে যায়। নষ্ট হয়ে যায় ফুটন্ত ফুলের মতো জীবন। আমাদের সমাজের  কিছু ভদ্রবেশী অভদ্র মানুষের অর্থ দ্বারা ক্রয়কৃত কিছু সময়ের ভালোবাসার ফল পতিতা পল্লীর যৌন কর্মীদের নিঃস্পাপ শিশুরা। 
যৌন পল্লীর সদস্যদের গর্ভে জন্মানো এই নিঃস্পাপ শিশুরাও আমাদের অংশ। এই শিশুদের আছে আমাদের মতো বাঁচার অধিকার। একটি শিশু নিষ্পাপ, আমাদের দেশ তাদের কে নাগরিক হিসাবে স্বীকৃতি প্রদান করলেও, সমাজের মানুষ তাদেরকে দেখে নিচু চোখে।আমরা যখন দেখছি স্কুলে পড়ার স্বপ্ন তখন তারা দেখে অন্ধকার গলির কুকর্ম।পতিতাপল্লীতে জন্ম নেওয়া শিশুদের আছে ভালোবাসা,স্নেহ,মমতা,প্রেম,রাগ,বিরাগ,যৌনতা। আছে ক্ষুধা,প্রেয়সীর আদরমাখা উষ্ণতায় নিজের সব দুঃখ ভোলার আদর কিংবা সন্তান হয়ে মায়ের বুকে অসীম ভালবাসা পাওয়ার কান্না। মন আর মান আছে বলে ও তারাও মানুষ।
শিশু অধিকার সনদের চারটি মূলনীতির একটি  হচ্ছে বৈষম্যহীন। এতে জাতি, বর্ণ, লিঙ্গ,ভাষা, বিকলঙ্গতা, ধর্ম, রাজনৈতিক বা অন্যান্য মতামত, জাতীয়, সামাজিক বা নৃতাত্ত্বিক  এবং সম্পত্তি, জন্ম বা অন্যান্য অবস্থান যাই হোক না কেন সবাইকে সমানভাবে মূল্যায়ন করার কথা বলা হয়েছে। সংক্ষেপে বলতে গেলে এর অর্থ হল সকল শিশুর, সকল পরিস্থিতিতে, সবসময়ে, সবখানে তাদের পরিপূর্ণ  বিকাশের অধিকার রয়েছে। এই অন্ধকার গলিতে জন্ম নেওয়া এই শিশু গুলো আসলে সবখানে কতটুকু পরিপূর্ণ অধিকার বিকাশ  করার সুযোগ পাচ্ছে। নাকি পরিপূর্ণ  বিকাশের অভাবেই স্বপ্নসারথির সোনার আলোগুলো নিভে যাবে। নাকি হয়ে উঠবে আগামী দিনের ওই অন্ধকার গলির পতিতাপল্লীর যৌনকর্মী। 
সমাজ পতিতাপল্লীর মায়েদের খারাপ মনে করে। তাই তাদের প্রিয় সন্তানকে বুকে নিয়ে অভাবের কড়াল গ্রাস সহ্য করে বেঁচে থাকতে হয়। এদেরকে  অন্য চোখে দেখা যাবে না কারণ তারাও মানুষ, আর সমাজে যে পাঁচটা শিশু আছে তাদের মতই দেখতে হবে। কারণ আমরা যদি এদেরকে বৈষম্য স্বীকার করি তাহলে কারা দিবে এদের ন্যায্য অধিকার। অধিকার যদি না দিতে পারি, তাহলে অন্ধকার গলিতে জন্ম নেওয়াই কি অপরাধ ছিল তাদের। আমরা কি কখন ভেবে দেখেছি তারা এত পেশা থাকতে কেনো এ পেশা টি গ্রহণ করল। পতিতাপল্লীর যৌনকর্মীদের  অন্ধকার গলিতে আসার পেছনের গল্প জানার কি কখনো চেষ্টা করেছি। যদি জানতাম তাহলে আর কখনোই গালাগালি দিতাম না বৈষম্য করতাম না শিশুদের ও নারীদের।কোলে বুকে টেনে নিতাম ওই  সকল শিশুদেরকে।আমাদের সরকারি-বেসরকারি এবং নিজ উদ্যোগে শিশুদের জন্য কিছু করতে হবে কারণ এই শিশু হয়ে  উঠতে পারে আগামী দিনের বাংলাদেশের সম্পদ। তাদের জন্য এই স্কুল-কলেজে কোটার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। তাদেরকে ভালোবাভাবে সমাজে বসবাসের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। লেখাপড়ার অধিকার থাকলেও কেনো লেখাপড়ার বন্ধ তাদের, সে সমস্যার সমাধান খুজে বের করে সমাধান করতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে তাদের মৌলিক অধিকারগুলো।