তারুণ্যের জাগরণে ঘুচবে বৈষম্যের দুয়ার


Admin প্রকাশের সময় : ১৮/০৬/২০১৯, ৫:০৯ AM
তারুণ্যের জাগরণে ঘুচবে বৈষম্যের দুয়ার

তারুণ্যের জাগরণে ঘুচবে বৈষম্যের দুয়ার

[বাংলাদেশ সরকারের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এসডিজি-২০৩০ এর ৫ম লক্ষ্যমাত্রা(জেন্ডার সমতা) অর্জনের লক্ষে বাংলাদেশের জাতীয় কর্মশালা অনুষ্ঠিত]

নিউজ ডেস্কঃ
নারী ও শিশু বান্ধব সমাজ গড়তে পুরুষের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। বৈষম্যহীন ও মানব মর্যাদার সমাজ প্রতিষ্ঠায় পুরুষদের ইতিবাচক ভাবে সম্পৃক্ত করে গেলে জেন্ডার সমতা অর্জন করা অনেকটাই সম্ভব। বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এসডিজি-২০৩০ এর ৫ম লক্ষ্যমাত্রা(জেন্ডার সমতা) অর্জনের লক্ষে গত ১২ জুন তরুণ ও তরুণীদের নিয়ে রাজধানীতে একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জাতীয় নেটওয়ার্ক এনগেজিং মেন এন্ড বয়েজ এই কর্মশালার আয়োজন করে। নেটওয়ার্কের সচিবালয় শিশু অধিকারভিত্তিক আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন ইন্টারন্যাশনাল ইন বাংলাদেশ কান্ট্রি অফিসের ভেনাস সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত দিনব্যাপী এ কর্মশালায় রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, বরিশাল, ময়মনসিংহ, কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ২২ জন তরুণ অংশগ্রহণ করেন। এ কর্মশালায় আদিবাসী ও প্রতিবন্ধী যুব সহ বিভিন্ন বৈচিত্র্যময় এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব ছিল চোখে পড়ার মত।

উক্ত কর্মশালায় প্রশিক্ষক ও আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এনগেজ মেন অ্যান্ড বয়েজ নেটওয়ার্ক (ই.এম.বি) বাংলাদেশ এর ন্যাশনাল কান্ট্রি কো অরডিনেটর উম্মে সালমা। ই.এম.বি স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব এবং সাব্বির হাসান। উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মডেল ইয়ুথ পার্লামেন্টের নির্বাহী প্রধান সোহানুর রহমান। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ইউএন ইয়ুথ আডভাইসারি প্যানেলের ইয়ুথ এডভাইসার সৈয়দা তাহসিনা হৃদিতা।

শুরুতেই তথাকথিত একদল হিজড়া সম্প্রদায়ের যৌথ কন্ঠে গাওয়া জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে কর্মশালা শুরু হয়, এরপর উপস্থিত সকলের সাথে পরিচয় বিনিময় হয়। তারপর সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে সকলের সেচ্ছাসেবিতার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে কর্মশালাটি শুরু করেন এনগেজ মেন অ্যান্ড বয়েজ নেটওয়ার্ক (ইএমবি) বাংলাদেশ এর ন্যাশনাল কান্ট্রি কো অরডিনেটর উম্মে সালমা।

কর্মশালাটির মুল উদ্যেশ্য ছিল,
১.সমাজে সকল ক্ষেত্রে নারী ও কিশোরী মেয়েদের ক্ষেত্রে সব ধরনের বৈষম্যের অবসান ঘটানো।
২.পাচার, যৌন হয়রানি ও সব ধরনের শোষণ বঞ্চনা থেকে অল্পবয়সী মেয়ে ও নারীদের মুক্ত রাখা।
৩. শিশু বিবাহ, বাল্য বিবাহ ও যৌনাঙ্গছেদের মত ক্ষতিকর প্রথার অবসান ঘটানো।
এরকম আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কিশোরী ও নারীদের নিরাপত্তা এবং সকল পর্যায়ে নারীদের পূর্ণাঙ্গতা, কার্যকর অংশগ্রহণ ও সমান সুযোগ নিশ্চিত করে এস.ডি.জি. ২০৩০ এর লক্ষমাত্রা বাস্তবায়ন করা।

এনগেজ মেন অ্যান্ড বয়েজ নেটওয়ার্ক (ই.এম.বি) বাংলাদেশ স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব, কর্মশালায় আলোচনার শুরুতে ব্রাজিলে ঘটে যাওয়া সমাজ পরিবর্তনে একজন যুবতীর চমৎকার উদাহরণ দিয়ে আলোচনা শুরু করেন। তিনি বলেন, ছেলে কিংবা মেয়ে সকলেই মানুষ। উভয়ের মধ্যেই সমাজের জন্য কাজ করার ও দেশের জন্য কাজ করার সকলের সাথে কাধে কাধ মিলিয়ে কাজ করার ক্ষমতা আছে। একজন শিশু কখনো সমাজে মেয়ে হিসেবে বেচে থাকার জন্য জন্ম নেয় না। কিন্তু জন্মের পর তার পারিপার্শিকতা তার আশেপাশের পরিবেশ, স্থানীয় সমাজ তাকে একজন মানুষ হিসেবে সাভাবিক ভাবে বেড়ে উঠতে দেয় না।কিন্তু এখন সময় এসেছে আমরা সকলে যার যার জায়গা থেকে চেষ্টা করব প্রাচীন সমাজের নারীদের অবহেলার সেই সনাতন প্রথাকে পরিবর্তন করে আমাদের সমাজের সেই সুস্থ পরিবেশ ফিরিয়ে আনব। যেখানে দেশের ইয়ুথ লিডাররা বড় ভুমিকা রাখবে।

বাংলাদেশ মডেল ইয়ুথ পার্লামেন্টের নির্বাহী প্রধান সোহানুর রহমান ইথিওপিয়া থেকে মেন এনগেজ এলায়েন্স বিষয়ে ৩দিনের আন্তর্জাতীক প্রশিক্ষণ নিয়ে কর্মশালায় এসে সকলের মাঝে কর্মশালার মুল উদ্যেশ্য ও ফলাফল বিস্তারিত আলোচনা করেন। এবং বাংলাদেশের শিশু ও নারী নির্যাতনের একটি মিডিয়া পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন যা আমাদের দেশের জন্য খুবই ভয়াবহ এবং দেশের জন্য লজ্জাজনক। এ অবস্থা থেকে দেশ ও সমাজকে রক্ষা করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের টেকশই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এসডিজি-২০৩০ এর ৫ম লক্ষ্যমাত্রা(জেন্ডার সমতা) অর্জনের জন্য কাজ করতে হবে।

এসময় এনগেজ মেন অ্যান্ড বয়েজ নেটওয়ার্ক (ইএমবি) বাংলাদেশ এর ন্যাশনাল কান্ট্রি কো অরডিনেটর উম্মে সালমা বলেন, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় কর্মক্ষেত্র ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান সকল জায়গায় নারীরা নানা ভাবে লাঞ্চিত ও শোষনের সিকার হয়ে থাকে। এ জায়গা গুলোতে নারীদের অবাধ বিচরনের জন্য তৃণমুল সমাজ ব্যাবস্থার গতানুগতীক ধারা কে পরিবর্তন করে ধর্ম, বর্ন, জাতী নির্বিশেষে নারী-পুরুষ ভেদাভেদ না রেখে নারীদের নারী না ভেবে মানুষ হিসেবে সমাজে স্থান দিয়ে সকল ক্ষেত্রে নির্বিঘ্নে পথচলার সুযোগ বাস্তবায়ন করতে হবে। এতে করে পরিবর্তন হবে আমাদের সমাজ; পুর্ন হবে বাংলাদেশ সরকারের এস.ডি.জি-২০৩০ এর ৫ম লক্ষমাত্রা।

কর্মশালায় উপস্থিত সকলের মাঝে, UN WOMEN থেকে প্রকাশিত “শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে মহামান্য হাইকোর্ট কর্তৃক প্রদত্ত নীতিমালা (৫৯১৬/২০০৮)” এর একটি বুকলেট প্রদান করা হয়।

সবশেষে বাংলাদেশে লিঙ্গ বৈষম্যকে মুছে দিয়ে দেশ তথা সমাজে জেন্ডার সমতা বাস্তবায়নের জন্য, তরূণদের কন্ঠকে উজ্জিবীত করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শিশু এবং ইয়ুথ লিডারদের নিয়ে একটি জাতীয় প্লাটফরম তৈরী করা হয়। এর দেওয়া হয়েছে “Youth Platform for Transforming Masculinities”। এবং সকলের যৌথ সিদ্ধান্তে আগামী ৬ মাসের একটি অ্যাকশন প্লান তৈরী করা হয়।