শৈশবে বঙ্গবন্ধু,,,


Admin প্রকাশের সময় : ১৮/০৩/২০১৯, ৪:৫৮ AM
শৈশবে বঙ্গবন্ধু,,,
মুহাম্মাদ শরিফুজ্জামান,রাজশাহী

টুঙ্গিপাড়া গ্রামটি অবস্থিত মধুমতি ও ঘাগোর নদীর তীরে। গ্রামবাংলার চিরায়ত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় পরিবেশের এক প্রতীক টুঙ্গিপাড়া গ্রামটি। মধ্যযুগের কবি বিজয় গুপ্ত তার ‘পদ্মপুরাণ’ কাব্যগ্রন্থে ঘাগোর নদীর বর্ণনা দিয়েছেন এইভাবে, “টুঙ্গিপাড়া গ্রামের গাছগুলো ছবির মতো সারি সারি সাজানো ছিল। নদীতে তখন পালতোলা নৌকা, লঞ্চ, স্টিমার চলতো। বর্ষায় গ্রামটিকে মনে হতো যেন শিল্পীর আঁকা জলে ডোবা একখণ্ড ছবি।”

এমন এক গ্রামে ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ অভিজাত এক বংশে শেখ লুৎফর রহমান ও শেখ সায়েরা খাতুনের ঘরে জন্ম নেয় এক ফুটফুটে শিশু। বাবা-মা আদর করে নাম রাখলেন ‘খোকা’। এই খোকাই পরবর্তীতে হয়ে ওঠেন সংগ্রামী বাঙালীর প্রিয় নেতা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যাঁর নেতৃত্বে আমরা পেয়েছি স্বাধীন বাংলাদেশ।

বঙ্গবন্ধুর শৈশব কেটেছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি টুঙ্গিপাড়া গ্রামে। তিনি আবহমান বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে দেখতে বড় হয়েছেন। মানুষের প্রতি তাঁর ছিল অকৃত্রিম ভালোবাসা। গ্রামীন জীবনের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না তিনি গভীরভাবে প্রত্যক্ষ করেছেন। জমিদার, তালুকদার ও মহাজনের শোষণ তিনি ছোটোবেলা থেকে দেখেছেন। সেগুলো তাঁকে প্রচুর ভাবিয়েছে। শোষিত মানুষদের দুঃখকষ্ট তাঁকে তাদের প্রতি ভালোবাসায় সিক্ত করেছে। শৈশবে তিনি কোনো অন্যায় সহ্য করেননি। কোনো অন্যায় দেখলেই সঙ্গে সঙ্গে সেটার প্রতিবাদ করেছেন। শৈশবের এই মানসিকতা পরবর্তীতে অন্যায়ের কাছে মাথানত না করার জন্য উৎসাহিত করেছে।

শিশু মুজিবের পড়ালেখার হাতেখড়ি ঘটেছিল  মাস্টার, পণ্ডিত ও মৌলভী সাহেবদের কাছে। পরবর্তীতে তিনি মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, ইসলামিয়া কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেছেন। সংগ্রামী চেতনার মুজিব নিজের অধিকার আদায় করে নিতে জানতেন। অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী শেরে বাংলা একে ফজলুল হক একবার তাঁদের স্কুল পরিদর্শনে এসেছিলেন। তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব আর সাহসিকতায় মুগ্ধ হয়ে প্রধানমন্ত্রী তাঁদের স্কুল মেরামতের জন্য অর্থবরাদ্দ করেন।

ছোট্ট মুজিব পশুপাখিদের খুব ভালোবাসতেন। তিনি দোয়েল ও বাবুই পাখিদের খুব ভালোবাসতেন। বাড়িতে শালিক ও ময়না পুষতেন। তাঁর প্রিয় খেলা ছিল ফুটবল।

প্রতিবাদী চেতনার মুজিব প্রতিবাদের এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন মাত্র তের বছর বয়সে। ঐ সময় গোপালগঞ্জে চলছিলো স্বদেশী আন্দোলন। সেই আন্দোলনে পুলিশের লাঠিচার্জ তাঁকে বিক্ষুব্ধ করে তোলে। তিনিও বন্ধুদের নিয়ে তিনি যোগ দেন সেই বিক্ষোভে। শতশত ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে পুলিশ সদস্যদের নাজেহাল করে তোলেন। ছোট্ট মুজিবের সাহস দেখে বিস্মিত হয় সবাই। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময়, মাত্র পনেরো বছর বয়সে তিনি রাজনৈতিক রোষানলে পড়ে কারাবরণ করেন। সংগ্রামী জীবনে এটিই ছিল তার প্রথম কারাবরণের ঘটনা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজীবন দুখী, শোষিত ও অসহায়-নিরন্ন মানুষদের ভালো চেয়ে এসেছেন। আমৃত্যু এদের জন্য কাজ করে গেছেন। কালক্রমে পরিণত হয়েছেন, বাঙালী জাতির প্রিয় নেতা হিসেবে। অন্যায়ের কাছে তিনি মাথানত করেননি। অন্যায়ের কাছে আপোষহীন বঙ্গবন্ধু নিজের জীবন বাজি রাখতেও দ্বিধাবোধ করেননি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, বাঙালীর অবিসংবাদিত এই নেতা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কতিপয় ঘাতক, দেশদ্রোহীদের হাতে নিজ বাসভবনে সপরিবারে নির্মমভাবে নিহত হোন। টুঙ্গিপাড়াতেই শায়িত আছেন স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু আর বাংলাদেশ শব্দ দুটো সমার্থক। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, ততদিন বঙ্গবন্ধুর নাম চির অম্লান হয়ে থাকবে। সেইজনই বুঝি কবি বলেছেন, “যতদিন রবে পদ্মা, মেঘনা, গৌড়ী, যমুনা বহমান; ততদিন রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।”