সম্পাদকীয় -আমরা তোমাকে ভুলব না


Admin প্রকাশের সময় : ০২/১২/২০১৮, ১:২২ PM
সম্পাদকীয় -আমরা তোমাকে ভুলব না

কিশোরী মুক্তিযোদ্ধা বীরপ্রতীক তারামন বিবি
তারামন বিবি বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর নারী মুক্তিযোদ্ধা ।স্বাধীনতা যুদ্ধে তার অসামান্য অবদান ও অসীম সাহসিকতার জন্য ১৯৭৩ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে। সবাই তাকে তারামন বিবি নামে চিনলেও তার নাম নাম মোছাম্মৎ তারামন বেগম।
তারামন বিবি ১৯৫৭ সালে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের একটি জেলা কুড়িগ্রামের চর রাজিবপুর উপজেলার শংকর মাধবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।তারামন বিবির পিতার  নাম আবদুস সোহবান এবং মাতার নাম কুলসুম বিবি।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় তারামন বিবি ১৩ কিংবা ১৪ বছর বয়সের দুরন্ত কিশোরী ছিলেন। ঠিক তখনই তিনি  বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে তারামন বিবি ১১ নং সেক্টরে অধিনে কুড়িগ্রাম জেলার শংকর মাধবপুর গ্রামের মুক্তিবাহিনীর একটি ক্যাম্পে অংশগ্রহণের মধ্যদিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।মুক্তিযুদ্ধকালীন সময় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য খাবার তৈরী করা, তাঁদের অস্ত্র লুকিয়ে রাখা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা করা,কৌশলে পাকিস্তানি বাহিনীর গোপন তথ্য সংগ্রহ করতেন তিনি।
এসময় মুহিব হাবিলদার নামে এক মুক্তিযোদ্ধা তারামনের সাহস ও শক্তির পরিচয় পেয়ে তাকে সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য উৎসাহিত করেন। পরবর্তিতে নিজ হাতে তারামন বিবিকে অস্ত্র চালনা শেখান। পরবর্তীতে সহকর্মীদের কাছ থেকে অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ নিয়ে তাদের সাথে ছোটবড় অনেক যুদ্ধে এবং হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধে অস্ত্র হাতে অংশগ্রহণ করেন ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তীকালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭৩ সালে তৎকালীন বাংলাদেশ সরকার মুক্তিযুদ্ধা তারামন বিবিকে তার সাহসীকতা ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য “বীর প্রতীক” উপাধিতে ভূষিত করেন। 
কিন্তু এই যুদ্ধবিদ্ধস্ত বাংলাদেশে তাকে খুঁজে পেতে সময় লেগেছিল প্রায় ২২বছর। দীর্ঘ ২২ বছর পর ১৯৯৫ সালে কুড়িগ্রামের রাজীবপুর কলেজের অধ্যাপক আবদুস সবুর ফারুকী’র সহায়তায় ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষক বিমল কান্তি দে প্রথম তার সন্ধান পান।
এরপর নারীদের অধিকার নিয়ে কাজ কারে এমন কয়েকটি সংগঠন তাকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। সেই সময় তাকে নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রচুর লেখালেখি হয়। অবশেষে ১৯৯৫ সালের ১৯শে ডিসেম্বর তৎকালীন বাংলাদেশ সরকার একটি অনাড়ম্বর পরিবেশে আনুষ্ঠানিকভাবে তারামন বিবিকে বীরত্বের পুরস্কার তার হাতে তুলে দেন।
এই কিশোরী বীর প্রতিক তারামন বিবি  ২০১৮ সালের বিজয়ের মাসের প্রথম প্রহরে দেশবাসীকে কাঁদিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। 
আজ থেকে তিনি বেঁচে থাকবেন না পৃথিবীতে। কিন্তু তার কাজ,বীরত্ব অসামান্য সাহসীকতা এবং দেশপ্রেম তাকে আজীবন বাঁচিয়ে রাখবে ১৬ কোটি বাঙালীর হৃদয়ে।তিনি চিরকাল একজন দুর্ধর্ষ সাহসী বাঙালী কিশোরীর উদাহরণ হয়ে থাকবেন।
-সম্পাদক
শিশু বার্তা